বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কুয়াকাটার শুটকী ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর লাভের দিকে থাকলেও এবারের শুরুটা হয়েছে ব্যবসায়ীক ক্ষতি আর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। গত কয়েকমাসে শুটকী ব্যবসায় লোকসান দিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন অনেকেই। সংরক্ষণাগার ও যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় করোনা মহামারীতে বিক্রি না হওয়া শুটকীমাছ নষ্ট হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার। ফলে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রফতানি করার জন্য বিগত বছরগুলোর মতো প্রস্তুতি নিলেও মওসুমের শুরুতেই করোনার কারণে বাধার সৃষ্টি হয় এ ব্যবসার উপর। ফলে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে লকডাউনের মধ্যে দেশের ভিতরে বা দেশের বাইরে কোথাও মাছ রফতানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ফলে মুখ থুবরে পড়েছে এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একদিকে ব্যাংকের লোন পরিশোধের দুশ্চিন্তা অন্য দিকে নতুন করে মহাজনের কাছ থেকে দাদনের ফাঁদে শুটকী ব্যবসায়ীরা। আর্থিক প্রণোদনা না পেলে তাদের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন শুটকী ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা।
হতাশার মাঝেও শুটকী পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছে স্থানীয় কারিগরসহ দূর-দুরান্ত থেকে আগত কর্মজীবিরা। মাচা তৈরি করে হরেক রকমের মাছ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় এখানকার শুটকী পল্লীতে। গুনগতমান বজায় থাকার কারণে কুয়াকাটার শুটকীর চাহিদা সব জায়গায়। দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত, চায়না এ রকমের অনেক দেশে রফতানি করা হয়। প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মব্যস্ততায় অক্টোবরের শুরু থেকেই মার্চ
পর্যন্ত চলমান থাকে এখানকার শুটকী মাছের উৎপাদন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার তথ্যমতে, কুয়াকাটা থেকেই প্রতি বছর ১৫০-২০০ কোটি টাকার মতো শুটকী দেশে ও দেশের বাইরে বিক্রি হয়। অক্টোবরের শুরু থেকে শুটকীর কাজে নিয়োজিত হয় এখানকার জেলেরা।
ব্যবসায়ী মো: রফিক বলেন, ‘আমাদের এখানে যদি আধুনিক সংরক্ষণাগার থাকতো তাহলে আমাদের এতো ক্ষতি হত না। আমার ১৫ থেকে ২০ হাজার কেজি শুটকী মাছ ঘরে পড়ে আছে যা এবারে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হবে।’
আড়ৎদার মো. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা দেশের মধ্যে এমনকি দেশের বাইরে শুটকী পাঠাতে না পেরে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অনেক।’
স্থানীয় আরেক শুটকী ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন জানান, ‘শুটকী ব্যবসায় প্রচুর মূলধন লাগে। মওসুম শুরু হওয়ার আগেই প্রায় সকল ব্যবসায়ী নিজের মূলধনের পাশাপাশি ধারকর্জ করে লাখ লাখ টাকা এনে মাছ কিনে শুটকী করে এ ব্যবসা চালু করেন। এখান থেকে কিছু মাছ স্থানীয় শুটকী মার্কেটে বিক্রি হয় বেশির ভাগ রফতানি হয় বিভিন্ন দেশে। এবারে করোনার কারণে বেশিরভাগ শুটকী বিক্রি না হওয়ায় আমার সাত থেকে আট লাখ টাকা লোকসান হবে। ফলে কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে শুটকী পল্লীর ব্যবসায়ীদের।’
শুটকী মার্কেট ব্যবসায়ী সোহেল মাহমুদ জানান, ‘আমাদের এই মার্কেটে প্রতিটি দোকানে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ পড়ে আছে কিন্তু বিক্রি নেই। যে পরিমাণে লোকসান হয় তা কিভাবে পোষাবে ব্যবসায়ীরা তা জানি না। তাই এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারি প্রণোদনা ও ব্যবসার সাথে জড়িতদের কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: জহিরুন্নবী জানান, নিরাপদ ও মান সম্পন্ন শুটকী উৎপাদনের জন্য কুয়াকাটার সুনাম রয়েছে। তবে এ বছর লোকসানের মুখে শুটকী ব্যবসায়ীরা। আমরা চেষ্টা করছি যাতে সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় শুটকী ব্যবসায়ীরা আসতে পারে।
Leave a Reply